
আজ বিশ্ব বেতার দিবস । শুধুমাত্র কি আশ্বিনের শারদ প্রাতের সেই মনোমুগ্ধকর কণ্ঠের স্তোত্র শোনার জন্যই রেডিও ? না কি বেতার আছে বেতারেই। নস্ট্যালজিক বেতার- কলম ধরেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়,বাঁকুড়াঃ ১৩ই ফেব্রুয়ারি মানেই বিশ্ব বেতার দিবস । ইংরেজিতে 'ওয়ার্ল্ড রেডিও ডে' । এই দিন থেকে এগারো বছর আগে ২০১৪ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর ৩৬তম সাধারণ সম্মেলনে দিনটিকে 'বিশ্ব বেতার দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয় । কেন ১৩ই ফেব্রুয়ারি ? আসলে ১৯৪৬ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি থেকে ইউনেস্কোর একটি নিজস্ব বেতার কেন্দ্র চালু হয় । সেই কারণেই ১৩ই ফেব্রুয়ারি । আজকের সকাল থেকেই কলকাতার আকাশবাণী কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত হচ্ছে বিশ্ব বেতার দিবসের অনুষ্ঠান । আকাশবাণী এখন বেতার থেকে বেরিয়ে সমাজ মাধ্যমেও এসে গিয়েছে । গণমাধ্যমের এক উল্লেখযোগ্য সংস্থা আকাশবাণী । ১৯২৭ সালে প্রথম মুম্বই ও কলকাতা কেন্দ্র থেকে ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস নামে সম্প্রচার শুরু হয় । ১৯৩৬ সালে নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম হয় 'অল ইন্ডিয়া রেডিও' । ১৯৯৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে প্রসার ভারতী আইন বলে দূরদর্শন ও আকাশবাণীকে স্বশাসিত সংস্থা বলে ঘোষণা করা হয় । বর্তমানে দেশের বেতার কেন্দ্রগুলো ২৪টি ভাষা, ১৪৬টি উপভাষা, ১৪৯টি মিডিয়াম ওয়েভ, ৫৫টি এফ এম ট্রান্সমিটার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে । তথ্য অনুযায়ী দেশের ২৭টি রাজ্য, তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০৭টি শহরে ৩৮০টি বেসরকারি এফএম চ্যানেল চালু আছে । এছাড়াও তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ২৫০টি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন চালু আছে । দেশের ৯৯.১৯ শতাংশ মানুষের কাছে বেতারের অনুষ্ঠান পৌঁছে যায় । যদিও মানুষ রেডিও এখন তেমনটি শোনেন না । রেডিও শ্রোতা তলানিতে । এটা ভীষণ আক্ষেপের বিষয় ।
অথচ বেতার শিক্ষামূলক, সংবাদমূলক, বিনোদনমূলক, সূচনামূলক সুন্দর সুন্দর প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে । গ্রাম-গঞ্জে এখনও কিছু ঘরে রেডিও-সেট দেখা যায় । শহরে কদাচিৎ চোখে পড়ে । রেডিও-সেট বিক্রিও খুব কম । অনেক জায়গায় রেডিও ব্যাটারি, রেডিও মেরামতের কারিগরের অভাব আছে । বাঁকুড়া শহরের নতুনগঞ্জের রথতলায় রয়েছে সুব্রত চক্রবর্তীর রেডিও সারাইয়ের দোকান । পঞ্চাশ বছর ধরে তিনি রেডিও সারিয়ে চলেছেন । সুব্রতবাবুর আক্ষেপ-'এখন আর সেভাবে রেডিও সেট সারাবার জন্য মানুষ আসেন না । কদাচিৎ কখনও কেমন আসেন । এতে সংসার চলেনা । অগত্যা রেডিও সারাইয়ের পাশাপাশি অন্য কিছু বিক্রি ও সারাইয়ে হাত লাগাতে হয়েছে ।' বর্তমানে নতুন রেডিও-সেট বাঁকুড়া শহরে বিক্রি হয় । দামও তেমন বেশি কিছু নয় । ব্যাটারি সেট সাড়ে চারশো টাকা থেকে এবং ইলেকট্রিক সেট সাড়ে সাতশো টাকা থেকেই পাওয়া যায় । জনৈক রেডিও বিক্রেতার কথায়-'রেডিও কিনতে কেউ আসেন না । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর 'মন কি বাত' অনুষ্ঠান শোনার জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুরাগী মানুষেরা কয়েকটি রেডিও কিনে নিয়ে যান । বর্তমানে একটি রাজনৈতিক দলের লোকেরাই রেডিওর বড় শ্রোতা এটি অনুমান করা ভুল হবে না । রেডিওর অনুষ্ঠান যেহেতু শোনা যায়, দেখা যায় না, তাই কে শোনে গোছের মানসিকতার জন্য রেডিও আর অধিকাংশ মানুষ শুনছেন না । রেডিও ভালোবাসার জায়গা । রেডিও ভালো লাগার জায়গা । রেডিও একটা জগৎ । রেডিও সর্বধর্ম । রেডিও একটি বিশ্ববিদ্যালয় । ওয়ার্ল্ড রেডিও ডে-তে অনুরোধ রেডিও শুনুন । বিনোদন নিন । খবর শুনুন । নাটক-যাত্রা-খেলা শুনুন ।